সিরাজগঞ্জ পরিচিতি,
সিরাজগঞ্জ মধ্য বাংলাদেশে অবস্থিত একটি শহর। এটি যমুনা নদীর তীরে, এবং ঢাকা শহর হতে প্রায় ১১০ কিলোমিটার (৭০ মাইল) উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্র্রান্তে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ জেলা উত্তরবঙ্গের প্রবেশ দ্বার হিসেবে সুপরিচিত। যমুনা নদী বিধৌত এ জেলার ভৌগলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন বৈচিত্রময়। এ জেলাটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলাই যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। ফলে নদী ভাঙ্গন এ জেলার জনসাধারণের নিত্য সঙ্গী। এছাড়া বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে চলনবিলের অবস্থান। ভৌগলিক কারণেই বন্যা, খরা, নদী ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ জেলার জনসাধারণ জর্জরিত। সব মিলিয়ে দারিদ্র, বেকারত্ব এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে অন্তরায়।
সিরাজগঞ্জ শহর, সিরাজগঞ্জ শহরটি সিরাজগঞ্জ জেলার প্রধান শহর। এখানে ১৫টি ওয়ার্ড এবং ৫২টি মহল্লা রয়েছে। ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ২৯,৪৪,০৮০ জন। সিরাজগঞ্জ শহরকে এক সময় কলকাতা ও নারায়ণগঞ্জ এর সমতুল্য পাট ব্যবসায় কেন্দ্র হিসাবে গণ্য করা হত। বর্তমান কালেও এটি পাট ব্যবসায়ের একটি প্রধান কেন্দ্র, এবং সড়ক, রেল ও নৌপথে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে যুক্ত। এখানকার পাট কল গুলি তদানিন্তন বাংলা প্রদেশের প্রথম দিককার পাট কলের মধ্যে পড়ে। তাঁতশিল্প এ জেলাকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছে। বঙ্গবন্ধু সেতু (যমুনা সেতু) এবং সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধের অপূর্ব সৌন্দর্য এ জেলাকে পর্যটনসমৃদ্ধ জেলার খ্যাতি এনে দিয়েছে। তা ছাড়া শাহজাদপুর উপজেলার রবীন্দ্র কাচারিবাড়ি, এনায়েতপূর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল, মিল্কভিটা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তের ইকোপার্ক, বাঘাবাড়ি বার্জ মাউনন্টেড বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, বাঘাবাড়ি নদী বন্দর ইত্যাদি বিখ্যাত স্থাপত্য ও শৈল্পকর্মের নিদর্শন এ জেলাকে সমৃদ্ধতর করেছে।
নামকরণের ইতিহাস, সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলায় সিরাজউদ্দিন চৌধুরী নামক এক ভূস্বামী (জমিদার) ছিলেন। তিনি তাঁর নিজ মহালে একটি ‘গঞ্জ' স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় সিরাজগঞ্জ। কিন্তু এটা ততটা প্রসিদ্ধি লাভ করেনি। যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে ক্রমে তা নদীগর্ভে বিলীন হয় এবং ক্রমশ উত্তর দিকে সরে আসে। সে সময় সিরাজউদ্দিন চৌধুরী ১৮০৯ সালের দিকে খয়রাতি মহলরূপে জমিদারী সেরেস্তায় লিখিত ভুতের দিয়ার মৌজা নিলামে খরিদ করেন। তিনি এই স্থানটিকে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রধান স্থানরূপে বিশেষ সহায়ক মনে করেন। এমন সময় তার নামে নামকরণকৃত সিরাজগঞ্জ স্থানটি পুনঃ নদীভাঙ্গণে বিলীণ হয়। তিনি ভুতের দিয়ার মৌজাকেই নতুনভাবে ‘সিরাজগঞ্জ' নামে নামকরণ করেন। ফলে ভুতের দিয়ার মৌজাই ‘সিরাজগঞ্জ' নামে স্থায়ী রূপ লাভ করে।