কাশীনাথপুর এসেছেন কখনও ? এখানে একটি চমৎকার ফুলবাগান ছিল। কাশীনাথপুর পার্ক বলা হতো একে। এখন আর নেই। বিশ্ব রোডের প্রয়োজনে যে টুকু অবশিষ্ট ছিল সেটুকুও নিশ্চিন্ন। কে বলবে এখানে একদিন কত অজস্র ধরনের ফুল ফুটে থাকত, সুগন্ধ ছড়াতো এখানকার বাতাসে। কাশীনাথপুরের পাবনা, বগুড়া বাস স্ট্যান্ডের মধবর্তী স্থানটির কথাই বলছি, অথবা কাশীনাথপুর হতে বগুড়া-পাবনা মহাসড়ক দুটো যেখান হতে বিচ্ছিন্ন হলো সেই স্থানটিকেই বোঝাতে চাচ্ছি। ওখানেই ছিল আমাদের ফুল বাগান বা পার্ক। মতিঝিলে যেমন মতি নেই,শান্তি নগরে যেমন শান্তি নেই, গুলশানে যেমন আর কেউ গুল মারে না, কলাবাগানের মেয়েরাই যেমন শুধু কলা দেখায় না, রথ খোলায় যেমন রথ নেই, কমলাপুর যেমন কমলা গাছ শূন্য, আমাদের কাশীনাথপুরের ফুলবাগানও আজ ফুল শূন্য। খেদি বেঁচে নেই, তবু খেদির মা। ফুল নেই, তবু আজও এটিই আমাদের ফুল বাগান। উত্তর-দক্ষিণ দিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমুহের সাইনবোর্ড গুলোর দিকে চেয়ে দেখুন, ঠিকানা-ফুল বাগান। সে সব প্রতিষ্ঠানের প্রচার পত্রের দিকে দৃষ্টি দিন, ফুল বাগান। এখানে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,ছাত্র সভা,গ্রাম্য শালিশ, শিশু বা শ্রমিক সমাবেশ হলে এলাকা ব্যাপী মাইকে মাইকে প্রচার,স্থান-ফুল বাগান। অতএব,ফুলশুন্য এ স্থানটি এখনো আমাদের কাছে ফুল বাগান নামেই পরিচিতি।
সেই আইয়ুব খাঁর আমলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রচুর অর্থ ব্যায়ে এ পার্ক নির্মাণ করেছিলেন। মনে পড়ে-পার্কের চার পাশে কাঁটা তারের বেড়া। মানুষের সঠিক চলাচলের জন্য পার্ক জুড়ে ছবির মতো ইটের বর্ডার দেয়া কিছু রাস্তা। উত্তর পশ্চিম পার্শ্বে ছোট্র একটি রেষ্ট হাউস। কত মূল্যবান আসবাবপত্র দিয়েই না রেষ্ট হাউসটি সাজানো থাকতো। ছায়া আর সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্য সমগ্র পার্কের এখানে সেখানে কত অজস্র ফল,ফুলের গাছ। সে সময় গাছে গাছে ফুটে থাকত সাদা গোলাপ,কাঠ গোলাপ, হাজারী গোলাপ ও কালো গোলাপ। পার্কের বাতাসে সুগন্ধ ছড়াতো, এখানে সেখানে শোভা পেত অজস্র রক্ত জবা, কেওড়া,গ্যাঁদা,সূর্যমুখী, রজনী গন্ধা,হাস্নাহেনা,মাধবী লতা,ডালিয়া,চন্দ্র মলিকা,বিস্কুট ফুল,বেলি ফুলসহ আরও কত ফুল। কি সুন্দর যে লাগতো এখানকার সব কিছুই! চতুরপার্শ্বের দশ,পনের মাইলের মধ্যে সুন্দর স্থান বলতে এই পার্ককেই ধরা হতো। সে সময় কোথাও বেড়াতে গেলে এই পার্ক নিয়ে কত কথা, কত প্রশংসা। বড় গর্বের স্থান ছিল এই পার্ক বা ফুল বাগান। সেই জম্মলগ্নে মানুষের বসার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই পার্কের স্থানে স্থানে স্থাপন করেছিলেন অসংখ্য সিমেন্টর বেঞ্চ। পূর্ব দিকে একটি বড় সিমেন্টর ছাতা ও ঠিক তার নিচে দুই সারিতে বেশ কিছু সিমেন্টর রাউন্ড বেঞ্চ। সিমেন্টে কালো রং মেশানো হয়েছিল। সব কিছুই ছিল চেয়ে চেয়ে দেখার মত।