রাজশাহী শহরের অদূরে মতিহারের সবুজ চত্বরে অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার দৃষ্টিনন্দন অংশ বিশেষ ' প্যারিস রোড ' নামে সু-পরিচিত। প্যারিস রোড বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট হতে শের-ই-বাংলা হল পর্যন্ত বিস্তৃত। উভয় পার্শ্বের সুউচ্চ গগণসিঁড়ি গাছের (রেইন ট্রি) বিন্যাস এই রোড-কে প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। প্যারিস রোড নামকরণের কারণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। নামকরণের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশিত না হওয়ায় বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ায় শ্রেয়।
সাধারণভাবে প্যারিস রোডের জাদুকরী সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের মনে অনাবিল প্রশান্তি সৃষ্টি করে থাকে। কিন্তু অতীত কিংবা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে একেক সময় প্যারিস রোডে উপস্থিতির অনুভূতি একেক রকম হয়ে থাকে। অনুভূতিতে বৈচিত্র্যময় এই প্যারিস রোডকে তাই সকলে আবেগ ও সৌন্দর্য দিয়েই মূল্যায়ন করে থাকে।
এ রোডের উভয় পার্শ্বে অবস্থিত স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো একে আরো তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। শের-ই-বাংলা হল প্রান্ত থেকে প্যারিস রোডের উত্তর দিক সংলগ্ন দর্শনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ভবন ও স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শহীদ মিনার কমপ্লেক্স (শহীদ মিনার, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, দুটি মুরাল ও উন্মুক্ত মঞ্চ), প্রশাসন ভবন-১, বিস্তৃত আম বাগান, ঘাট বাধানো পুকুর, মাঠ ইত্যাদি। দক্ষিণে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, প্রশাসন ভবন-২, সুবর্ণ জয়ন্তি টাওয়ার, সিনেট ভবন, সাবাশ বাংলাদেশ নামে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য, উপাচার্যের বাসভবন, জুবেরী ভবন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে কিছু দূর এগিয়ে, প্রশাসন ভবন-১ -এর ঠিক সম্মুখে প্যারিস রোডে অবস্থিত গোলাকার স্থানটি জোহা চত্বর নামে পরিচিত। গোল চত্বর নামেও স্থানটির পরিচিতি আছে। এ স্থানে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন শহীদ ড. শামসুজ্জোহা। শহীদ ড. শামসুজ্জোহা ছিলেন রসায়ন বিভাগের রিডার (সহযোগী অধ্যাপক) ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলা কালে, ১৯৬৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বর্বর পাকিস্তানি সেনারা ড. শামসুজ্জোহাকে প্রথমে কাছ থেকে গুলি করে ও পরে বেনোয়েট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে দীর্ঘ সময় ফেলে রাখে। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাঁকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর '৬৯' এর আন্দোলন গন-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। ড. শামসুজ্জোহাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসাবে গণ্য করা হয়। ২০০৮ সালে শহীদ ড. শামসুজ্জোহাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। ফলে প্যরিস রোডের এই স্থানটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।