Santiniketan - শান্তিনিকেতন

Santiniketan, Birbhum, 731235
Santiniketan - শান্তিনিকেতন Santiniketan - শান্তিনিকেতন is one of the popular Media located in Santiniketan ,Birbhum listed under Landmark & Historical Place in Birbhum ,

Contact Details & Working Hours

More about Santiniketan - শান্তিনিকেতন

শান্তিনিকেতন ১৮৬৩ সালে আশ্রম হিসেবে এর যাত্রা শুরু। রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিনহার কাছ থেকে বিশ বিঘা জমি কিনে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। পশ্চিম বাংলার বীরভূম জেলার অন্তর্গত বোলপুরের কাছে এই আশ্রম অবস্থিত। জাগতিক করণীয় কর্ম থেকে মুক্ত হয়ে প্রার্থনায় সময় কাটানোর জন্য গৃহী ব্যক্তিদের নির্জন আশ্রয় দান করা ছিল এই আশ্রমের উদ্দেশ্য। ১৮৮৮ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট- একটি অতিথিভবন, প্রার্থনা কক্ষ এবং ধর্মীয় সাহিত্যের জন্য নিবেদিত গ্রন্থাগারের সংস্থান করেছিলেন। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন আশ্রমে শিশুদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এর ঠিক আগে পারিবারিক জমিদারির ব্যবস্থাপনার কাজে তিনি পদ্মা তীরের শিলাইদহে দশ বছর কাটিয়েছিলেন। জমিদারির ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে তিনি গ্রামের মানুষের জীবনযাপন প্রণালী সম্পর্কে অবহিত হন এবং তা তাঁকে সমাজের জন্য গঠনমূলক কিছু করতে আগ্রহী করে তোলে। শিক্ষা এবং গ্রামীণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রকে বেছে নিয়ে তিনি শিলাইদহে তাঁর কার্যক্রম শুরু করেন এবং পরে স্থান পরিবর্তন করে শান্তিনিকেতনে চলে আসেন।
শান্তিনিকেতন আশ্রম, কলকাতা

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ একটা আদর্শ স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। বাল্যকালে তাঁকে যেসব স্কুলে পাঠানো হয়েছিল সেগুলি সম্পর্কে তিনি খুশি ছিলেন না। তিনি মনে করতেন যে, ইংরেজি স্কুলগুলি ছিল ভারতীয় জীবনধারা, সমাজ ও সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন। শান্তিনিকেতনকে বেছে নেওয়ার পেছনে তাঁর তিনটি স্পষ্ট লক্ষ্য ছিল: প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে আদর্শ প্রাকৃতিক পরিবেশে শিশুদের বেড়ে ওঠা; পরিবর্তনশীল ভারতে শহর ও গ্রামের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে শিক্ষা দান; এবং বৃহত্তর বিশ্বকে গ্রহণের উপযুক্ত করে তোলার জন্য জ্ঞানদান করা।

স্বদেশী আন্দোলনের সময় শান্তিনিকেতন স্কুল শুরু হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষে এটি বিশ্বভারতীতে রূপান্তরিত হয়। শান্তিনিকেতন আশ্রমে প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন স্কুল এবং বিশ্বভারতী মিলে গড়ে উ ঠেছে শিক্ষা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনার সমগ্রতা। ১৮৬৩ সালে শান্তিনিকেতন আশ্রম, ১৯০১ সালে স্কুল এবং ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হলেও এগুলি আলাদা ও বিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠান ছিল না।

আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী শুরু হওয়ার আগেই রবীন্দ্রনাথের মনে এই সমগ্রতার চিন্তা ছিল। ১৯১৬ সালে তিনি তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথকে লিখেছিলেন: ‘পৃথিবীর সঙ্গে ভারতকে সংযুক্ত করার সূত্র হিসেবে শান্তিনিকেতন স্কুলকে গড়ে তুলতে হবে। সেখানে আমাদের পৃথিবীর সকল মানুষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবতাবাদী গবেষণার জন্য একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে ... আমার শেষ কয়েক বছরের কাজ হবে জাতীয় অন্ধ স্বদেশপ্রেমের কুন্ডলী থেকে বিশ্বকে মুক্ত করা।’ ভারতকে তিনি এর স্বাতন্ত্র্য-চেতনা থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: ‘সেবা করতে ও পেতে, দিতে এবং নিতে, বিশ্বের সঙ্গে আমাদের অবশ্যই একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। বিশ্বের জ্ঞানভান্ডার থেকে ভারত বিচ্ছিন্ন, শিক্ষার নামে সে যা পায় তা সামান্য। বিশ্বের তুলনায় ভারতের শিক্ষা প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ের। আমরা এখন এই আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অবমাননা থেকে মুক্তি চাই।’

এই নতুন ধারণাটি ছিল বিশ্বের সংস্কৃতিসমূহের সমন্বয় ও সহযোগিতার। ভারতীয় সংস্কৃতির যথার্থ একটি কেন্দ্র প্রথমে ভারতের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এবং পরবর্তীকালে সাধারণভাবে বিশ্বের সকল সংস্কৃতিতে সৃজনশীল ও বিশ্বজনীন সংস্কৃতির লালন করবে। এই ধারণাটিই বিশ্বভারতীর জন্ম দিয়েছিল। বৈদিক, পৌরাণিক, বৌদ্ধ, জৈন এবং ইসলামি মানসের সম্পদ আহরণ করা ছিল পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত। আশা করা হয়েছিল যে, এ জ্ঞান ভারতকে বৈচিত্র্যের মধ্যে তার স্বরূপ খুঁজে বের করার পথ দেখাবে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন: ‘এই প্রসারিত ও পরস্পর গ্রথিত পথে আমাদের নিজেদেরকে উপলব্ধি করতে হবে, নচেৎ আমরা যে শিক্ষা লাভ করব তা হবে ভিক্ষুকের মতো। ভিক্ষা করে কোন জাতি ধনী হতে পারে না।’

বিশ্বভারতীর ধারণায় সার্বিক কর্মকান্ডের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুতরাং শ্রীনিকেতনে অর্থনীতিবিদ, কৃষিবিদ, সমাজকর্মী, চিকিৎসক, ধাত্রী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং গ্রামীণ শিল্প ও শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণও গ্রামীণ সমস্যার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে গ্রামবাসীদের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কাজ করতেন। গবেষণা ও গবেষণালব্ধ জ্ঞানের মধ্য দিয়েই শান্তিনিকেতনের কার্যপদ্ধতি গড়ে উঠেছিল। গ্রামের যুব সম্প্রদায়কে আত্মনির্ভরশীলতায় ব্রতী করার জন্য ‘ব্রতী বালক সংগঠন’ নামে একটি স্কাউট আন্দোলনও সংগঠিত হয়েছিল। আশা করা হয়েছিল যে, শিশুদেরকে প্রস্ত্তত করতে পারলে বয়োজ্যেষ্ঠরাও আকর্ষণ বোধ করবেন। এর উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের মধ্যে ঝগড়ার ফলে ক্ষতবিক্ষত হওয়া গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠদের মনে সহযোগিতার একান্ত প্রয়োজনীয়তাবোধ জাগানো।

সবকিছু মিলিয়ে শান্তিনিকেতনকে একটা স্কুলের চেয়ে বেশি কিছু হিসেবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এটা স্বতন্ত্রভাবেই ছিল এমন একটি সমাজ যেখানে শিক্ষক ও ছাত্র, গৃহাধিকারী ও দর্শনার্থী, বাঙালি ও অবাঙালি, ভারতীয় ও অভারতীয় সবাই একসাথে বসবাস ও জ্ঞানার্জন করবে।

নতুন এক শিক্ষার মাধ্যমে ভারতীয় মানসকে হীনমন্যতা থেকে মুক্ত করাও ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রত্যাশা। তিনি ভেবেছিলেন যে, এটি সম্ভব হলে নিছক জীবিকার প্রয়োজনের বাইরে তা জীবনের মূল উদ্দেশ্য প্রকাশ করবে। শিক্ষার শুরু থেকেই শিশুরা সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের অর্থ উপলব্ধি করুক এটা রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন।

১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিশ্বভারতী-পরিকল্পনার তত্ত্ব সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং ‘যত্র বিশ্বম্ ভবত্যেকনীড়ম্’ (যেখানে বিশ্ব একটি নীড়ে পরিণত হবে)-কে এর মূলমন্ত্ররূপে গ্রহণ করেন। ১৯২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠা হয়। রবীন্দ্রনাথ আমৃত্যু ছিলেন এর চ্যান্সেলর (আচার্য); অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সরোজিনী নাইডু ছিলেন তাঁর উত্তরসূরি।

প্রাথমিক পর্যায়ে বহু বিশিষ্ট ইউরোপীয় পন্ডিত বিশ্বভারতীর উন্নয়নে অবদান রেখেছিলেন। তাঁদের মধ্যে সিলভা লেভি, স্টেন কনো, তুচ্চি, কলিন্স, ভোগডানভ, অাঁদ্রে কারপেলেস, স্টেল্লা ক্রামরিশ, লিওনার্ড এমহার্স্ট গ্রামীণ সমাজকল্যাণ কর্মকান্ডের উন্নয়নে সাহায্য করেছিলেন। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বিশ্বভারতীতে গ্রন্থাগারিকরূপে যোগদান করেছিলেন। ১৯৩৬ সালে গণশিক্ষার জন্য একটি বিভাগ এবং ১৯৩৮ সালে শিল্পসদন (চারুকলা ইনস্টিটিউট) সংযোজন করা হয়েছিল।

বিশ্বভারতীর বিভিন্ন অঙ্গ হচ্ছে পাঠভবন (বিদ্যালয়), শিক্ষাভবন (মহাবিদ্যালয়), বিদ্যাভবন (স্নাতকোত্তর ও গবেষণা), কলাভবন (চারুকলা), সঙ্গীতভবন (সঙ্গীত), পল্লী সংগঠন (গ্রামীণ সংগঠন), গ্রন্থন (প্রকাশনা) ইত্যাদি। ১৯৩৭ সালে অধ্যাপক তান ইয়ুন-সানের সহযোগিতায় চীনাভবন (চীন-ভারত পাঠ) সংযোজিত হয়েছিল। হিন্দিভবন ও রবীন্দ্রভবন যোগ করা হয়েছিল যথাক্রমে ১৯৩৯ এবং ১৯৪২ সালে; শেষোক্তটি হচ্ছে রবীন্দ্র গবেষণাকেন্দ্র এবং এতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পান্ডুলিপি, চিত্রকর্ম, চিঠিপত্র ও গ্রন্থগুলি রক্ষিত আছে।

১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ দেহ ত্যাগ করেন। দশ বছর পর বিশ্বভারতী ভারত সরকারের একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় এবং সরকারই এর সম্পূর্ণ অর্থ যোগান দেয়। ১৯০১ সালে এর শুরুর সময় থেকে প্রতিষ্ঠানটির আয়তন বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও দুটি ক্ষেত্রে এর মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন থেকে কোন ডিগ্রি দেওয়া হতো না। বর্তমানে বিশ্বভারতী প্রতিটি পর্যায়েই দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমানের ডিগ্রি প্রদান করে। অন্য পরিবর্তনটি এসেছে আর্থিক ক্ষেত্রে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজের সীমিত সঙ্গতি দিয়ে মাত্র পাঁচজন ছেলে নিয়ে বিদ্যালয়টি শুরু করেছিলেন। শান্তিনিকেতন স্কুলের শুরুতে এর ব্যয়ভার নির্বাহের জন্য তাঁর স্ত্রী মৃণালিনী দেবী নিজের সমস্ত অলংকার বিক্রি করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ পুরীতে অবস্থিত তাঁর বাংলো বিক্রি করে দিয়েছিলেন। পিতার শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট থেকে আসা বছরে আঠারশ টাকার উপরই তিনি প্রধানত নির্ভর করতেন। পরে তিনি তাঁর নোবেল পুরস্কারের সমুদয় অর্থ স্কুলে দান করেন। ১৯২২ সালে তিনি তাঁর বাংলা গ্রন্থাবলির গ্রন্থস্বত্ব বিশ্বভারতীকে দান করেন। প্রাথমিক অবস্থায় অতি অল্প বেতনের শিক্ষকদের কাছ থেকেও সাহায্য এসেছিল। ইংল্যান্ডের ডব্লিউ.ডব্লিউ পিয়ার্সন এবং সি.এফ এন্ড্রুজ তাঁদের সর্বস্ব স্কুলে দান করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডরোথি এমহার্স্ট স্ট্রেইট এবং ইংল্যান্ডের লিওনার্ড এমহার্স্ট শ্রীনিকেতনের উন্নয়নের জন্য নিয়মিত আয়ের উৎসরূপে তাঁদের ডার্টিংটন হল ট্রাস্ট থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ দান করেছিলেন। ত্রিপুরা, বরোদা, জয়পুর, পিখপুরম, কাথিয়াওয়াড়, পোরবন্দর, লিমডি, আওয়াগড় ও হায়দ্রাবাদের রাজপরিবারগুলি এবং স্যার রতন টাটা শান্তিনিকেতনে প্রচুর দান করেছিলেন।

শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনকে বর্তমানে যেভাবে দেখা যায় তা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনের উত্তরাধিকারী। শ্রীনিকেতনের স্কুলটি তখনকার দিনের জীবনকে কিছুটা স্মরণ করিয়ে দেয়। খোলামাঠে ক্লাশ, মৌসুমি উৎসব, মন্দিরে প্রার্থনা সভা এবং এর সঙ্গীত আশ্রমের অতীত জীবনের আভাস দেয়। আদি পরিকল্পনার সম্পূর্ণতা অনেকটা হারিয়ে গেলেও এর কৃষি ও গ্রাম-সম্প্রসারণের কর্মকান্ডে প্রশিক্ষণসহ শ্রীনিকেতনের মতো কেন্দ্র এবং গ্রামের শিশুদের জন্য শিক্ষাসত্র স্কুল শিক্ষার প্রতি রবীন্দ্রনাথের সামগ্রিক মনোভাবের ছাপ বহন করে।

Map of Santiniketan - শান্তিনিকেতন